৫ মার্চ ২০২৩, রবিবার, ১১:০৭:৪৯
শীতের রুক্ষতাকে কাটিয়ে প্রকৃতির সজীবতা ফিরিয়ে আনে ঋতুরাজ বসন্ত। আর এ ঋতুরাজের অন্যতম বার্তাবাহক পলাশ। আবহমান গ্রাম-বাংলার প্রকৃতিতে নয়নাভিরাম পলাশ ফুল না দেখলে যেন অপূর্ণতা থেকে যায় বসন্তের। সুবাস না থাকলেও সৌন্দর্য ছড়াতে জুড়ি নেই পলাশের।
ব্যস্ততম ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেন মহাসড়কের বুক চিরে থাকা সড়ক বিভাজনে শত শত পলাশগাছ আপন মহিমায় রং ছড়িয়ে জানান দিচ্ছে বসন্তের উপস্থিতি। মহাসড়কের কুমিল্লার চান্দিনা-বাগুর বাসস্টেশন থেকে ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত রয়েছে অসংখ্য পলাশগাছ। ফাগুনের পাতাঝরা রুক্ষ প্রকৃতিকে জয় করে নগ্ন ডালজুড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে নীরবে সৌন্দর্য বিলাচ্ছে পলাশ। ওই বিভাজনে শতাধিক পলাশ ফুলে গাছ সেজেছে অপরূপ সাজে। গাছের সব ফুল ফুটে দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছে।
এ পথের যাত্রীদের চোখ জুড়িয়ে যায়। পাতাঝরা পলাশের পত্রহীন ডালগুলো যেন ফুলেল পোশাক পরেছে। প্রতিটি ডালে সারিবদ্ধ রাশি রাশি ফুলে প্রকৃতিতে লেগেছে নান্দনিক ছোঁয়া। পলাশগাছে কোকিল, শালিকসহ বিভিন্ন পাখির কলকাকলি তৃষ্ণা মেটাচ্ছে প্রকৃতিপ্রেমীদের। দুরন্ত পাখিরা এক ডাল থেকে অন্য ডালে উড়ে সৌন্দর্যে যোগ করছে বাড়তি মাত্রা।
এর মোহনীয় রূপ একঝলক দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন বিভিন্ন বয়সী মানুষ। আবার যাত্রাপথে ব্যক্তিগত পরিবহন থামিয়ে পলাশের সঙ্গে ক্যামেরাবন্দি হতে ভুল করছেন না অনেকে। কেউ বা গাছের তলা থেকে কুড়িয়ে নিচ্ছেন পলাশের কমলা রঙের ঝরা পাপড়ি।
একসময়ে এই পলাশগাছ ও ফুল গ্রামাঞ্চলের আঁকাবাঁকা সড়কের মোড়ে, বাগানে বা যত্রতত্র দেখা মিললেও এখন বিলুপ্তপ্রায়। পলাশের নাম জানেন না এমন লোক পাওয়া যেমন দুষ্কর, তেমনি এই প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা পলাশ ফুল চেনেন বা দেখেছেন এমন সংখ্যাও বেশ কম।
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. নজরুল ইসলাম জানান, চান্দিনায় আগে কয়েকটি পলাশগাছ চোখে পড়ত। বেশ কয়েক বছর ধরে পলাশগাছ বা ফুল আর চোখে পড়ে না। চান্দিনা থেকে বিলুপ্তপ্রায় গাছটি। তবে মহাসড়কে পলাশগাছ রোপণ করায় নতুন করে দেখতে পেয়েছি চিরচেনা এই ফুলটি।
মহাসড়কের চান্দিনার তীরচর এলাকায় গাড়ি থামিয়ে ছবি তোলা ঢাকার বাসিন্দা শ্রাবণী আক্তার জানান, পলাশের নাম শুনেছি, কিন্তু কখনো দেখিনি। আজ মহাসড়কের ওপর দিয়ে যাওয়ার পথে এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে গাড়ি না থামিয়ে পারলাম না। এখন আপনার কাছে জানতে পারলাম এটি পলাশ ফুল!
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পলাশের রূপে মুগ্ধ হয়ে লিখেছিলেন, ‘রাঙ্গা হাসি রাশি রাশি/ অশোকে পলাশে…/ রাঙ্গা নেশা মেঘে মেশা/ দিনের আকাশে’। পলাশ ফুল নিয়ে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামেরও একটি জনপ্রিয় গান রয়েছে-
‘হলুদ গাঁদার ফুল, রাঙা পলাশ ফুল
এনে দে এনে দে নইলে
বাঁধব না, বাঁধব না চুল’…
পলাশকে ইংরেজিতে বলে ‘ফ্লেইম অব দ্য ফরেস্ট’, অর্থাৎ অরণ্যের অগ্নিশিখা। পলাশের আরেক নাম কিংশুক। বৈজ্ঞানিক নাম ‘বুটিয়া মনোস্পার্মা’।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেরুন্নেছা জানান, পলাশ বৃক্ষটি ‘ফ্যাবাসিয়া’ পরিবারের সদস্য। পলাশ সর্বোচ্চ ১৫ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। শীতে এর পাতা ঝরে যায়। গাছটির বাকল ধূসর, শাখা-প্রশাখা এবং কাণ্ড আঁকাবাঁকা হতে দেখা যায়। পলাশের নতুন পাতা রেশমের মতো সূক্ষ্ম। গাঢ় সবুজ পাতারা ত্রিপত্রী। এর ফুল অনেকটা শিমের মতো। শাখা-প্রশাখায় ফুলগুলো থোকায় থোকায় ফোটে। পলাশের কুঁড়ি দেখতে টিয়া ও ময়না পাখির ঠোঁটের মতো। এর বংশবিস্তার ঘটে ডাল ও বীজ বপনের মাধ্যমে। ওষুধি গুণে ভরপুর এই গাছ রোপণে সবাইকে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন এই উদ্ভিদবিদ।
Rent for add
পায়রা নদীতে ধরা পড়ছে বড় বড় ইলিশ
পাঁচ লাখে বিক্রি ২৫ কেজির জাভা ভোল
নীলশির, পান্তামুখী, রাঙ্গামুরি, বনহুরের দল
পদ্মার এক বোয়াল ২২ হাজারে বিক্রি!
পদ্মায় ধরা পড়া পড়া ১৯ কেজির বোয়াল ৪৫ হাজারে বিক্রি
হিটস্ট্রোকে মারা গেলো ১৭ চাষির মাছ, ক্ষতি আড়াই কোটি টাকা