• ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

টাঙ্গুয়ার হাওরের নির্বিচারে কাটা হচ্ছে হিজল-করচ

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরের দৃষ্টিনন্দন হিজল ও করচবাগানের গাছ প্রতিদিনই কাটা হচ্ছে। হাওরের পাশের জলমহালগুলোর ইজারাদারদের বিরুদ্ধে জলমহালে মাছের ‘উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য’ গোপনে গাছ ও ডালপালা কেটে নিয়ে ‘কাঁটা’ হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে। তা ছাড়া স্থানীয় লোকজন ডাল-গাছ কেটে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে। এতে হিজল-করচের বাগান উজাড় হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিরূপ প্রভাব পড়ছে জীববৈচিত্র্যের ওপর।

বিশ্ব ঐতিহ্য টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রায় ১২০টি জাঙ্গাল-কান্দা (তীর) রয়েছে। নদী, খাল তথা জলাশয়ের এসব তীরে লাগানো হিজল-করচের গাছ কেটে ফেলায় বর্ষায় হাওরের উত্তাল ঢেউ (আফাল) থেকে হাওরবাসীকে সুরক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থাও এখন হুমকিতে। ঢেউয়ে ভেঙে যাচ্ছে হাওরের বাড়িগুলো। বিনষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য, অতিথি পাখির অভয়াশ্রম-বাসস্থান। নষ্ট হচ্ছে হিজল-করচের গাছগুলোকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকা নানা উদ্ভিদ-প্রাণী।

হাওরের জয়পুর, গোলাবাড়ী, রনচি, মন্দিআতাসহ বিভিন্ন এলাকার কান্দা ঘুরে গাছ কেটে নেওয়ার দৃশ্য দেখা গেছে।

তাহিরপুরের শামীম আহমদ বলেন, হাওরের আশপাশের গ্রামের কিছু মানুষ দা, করাত, কুড়াল দিয়ে প্রতিনিয়ত গাছ কাটে। হাওরের দুর্গম গ্রাম হিসেবে তারা বর্ষায় জ্বালানি সংকটে থাকে। তাই তারা গাছ কেটে নিয়ে যায়। এ জন্য স্থানীয় মানুষ, জনপ্রতিনিধিরা সচেতন না হলে এই নিধনকাজ বন্ধ করা সম্ভব হবে না। গাছ কাটার ফলে একসময় টাঙ্গুয়ার হাওরের সৌন্দর্য দেখতে আসবে না পর্যটকরা।

স্থানীয় পরিবেশকর্মী আহমদ কবির বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওরের হিজল-করচের বাগানে সারা বছর পাখি ও নানা উদ্ভিদ-প্রাণী অবস্থান করে। হিজলগাছের বাগান উজাড় হয়ে গেছে। অবশিষ্ট আছে কিছু করচ। আফাল থেকে এসব গাছের সারি প্রাকৃতিক দেয়াল হিসেবে আমাদের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাটের সুরক্ষা দেয়। এখন ইজারাদাররা এসব গাছ লুকিয়ে কেটে তাদের জলাশয়ে নিয়ে ফেলছে মাছ বৃদ্ধির জন্য। এতে হাওরের জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে। ’

টাঙ্গুয়ার হাওরের সুরক্ষায় নিয়োজিত সাবেক সংগঠন সিএনআরএসের কর্মকর্তা ইয়াহইয়া সাজ্জাদ বলেন, ‘বাইরের মানুষ দিয়ে টাঙ্গুয়াকে কখনো সুরক্ষা করা যাবে না। দেড় দশকের কার্যক্রমে আমরা এটা বুঝেছি। তাই স্থানীয় মানুষকেই হাওরের সুরক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। ’

সুনামগঞ্জ হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্য টাঙ্গুয়ার হাওর সংরক্ষণের নামে অতীতে বিনষ্ট হয়েছে। হাওরটির অরক্ষিত অবস্থার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন মহল গাছ কেটে হিজল-করচের বাগান উজাড় করে দিচ্ছে। এটা চললে টাঙ্গুয়ার হাওরের অবশিষ্ট সুন্দর ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য আরো বিনষ্ট হবে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘টাঙ্গুয়ারসহ অন্যান্য হাওরের যেসব প্রাকৃতিক বাগান রয়েছে, সেগুলো সুরক্ষার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া আছে। আমাদের টাঙ্গুয়ার হাওরের সুরক্ষার দায়িত্বে যেসব আনসার রয়েছে, তাদের আরো সক্রিয় করে গাছ কাটা বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হবে। ’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নব্বই দশকে টাঙ্গুয়ার হাওর জলমহালের ইজারাদার প্রয়াত জয়নাল আবেদিন হিজল-করচগাছগুলো লাগিয়েছিলেন। জলজ-স্থলজ জীববৈচিত্র্যের আধারখ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওরকে ২০০০ সালে রামসার সাইট (বিশ্ব ঐতিহ্য) ঘোষণা করে ইউনেসকো। তখন হাওরের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশ আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে নির্দেশনা দেওয়া হয় সরকারকে। পরে এ নিয়ে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হলেও আগের অবস্থায় ফেরেনি হাওর।

Rent for add